ঢাকা বুধবার, ১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বাংলাঃ ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ঢাকা বুধবার, ১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বাংলাঃ ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আরবীঃ ২৩শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
  1. Lead1
  2. Lead2
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ও জীবন
  6. কর্পোরেট নিউজ
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. চিকিৎসা
  10. চিত্র বিচিত্র
  11. পরবাস
  12. বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি
  13. বিজ্ঞাপন বার্তা
  14. বিনোদন
  15. রাজনীতি
আজকের সর্বশেষ সবখবর

‎ঐতিহাসিক আবাইপুর দিবস আজ : শৈলকুপার আবাইপুর যুদ্ধে শহীদ হয় ৪১ বীর মুক্তিযোদ্ধা

মোঃ আমোদ আলী,‎শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ৮:৩০ অপরাহ্ণ, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
Link Copied!

‎মোঃ আমোদ আলী,‎শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: ‎ঐতিহাসিক আবাইপুর দিবস আজ । ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার আবাইপুর নামক স্থানে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ মিলে ৪১ জন শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে দিনটি ‘আবাইপুর দিবস’ হিসেবে পরিচিত। ‎শৈলকুপা উপজেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার পূর্বে কুমার নদের ধারে আবাইপুর ইউনিয়ন ভবনের পাশে কয়েকটি গণকবরে তাদের সমাহিত করা হয়। গণকবর ঘিরে এখানে একটি শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিবছর ১৪ অক্টোবর স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে থাকে। ‎মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে পুরো ৯ মাস ধরেই ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা জুড়েই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের দাপট। উল্লেখ্য যে, ঝিনাইদহ জেলার ৬ টি থানার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন শৈলকুপা থানায়। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে দেশের নানান অঞ্চলের মতো শৈলকুপা উপজেলায়ও যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়।

‎‎শৈলকুপার আবাইপুর এলাকায় ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত ঘাঁটি। ১৩ অক্টোবর দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় আবাইপুরের মুক্তিযোদ্ধা ঘাঁটিতে খবর আসে সেখান থেকে ৯ কিলোমিটার পূর্বে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার খামারপাড়া বাজারে অগ্নিসংযোগ করছে পাক বাহিনী। খামার পাড়া বাজার থেকে তারা পশ্চিমের রাস্তা ধরে আবাইপুরের উপর দিয়ে শৈলকুপা হয়ে উত্তর দিকে কুষ্টিয়ার সেনাঘাঁটিতে অথবা দক্ষিণ দিকে যশোর সেনানিবাসে যাবে। এমন খবরে ১২৫ জনের একটা মুক্তিযোদ্ধা দল আবাইপুরে তাদের প্রতিহত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তাদের নের্তৃত্বে ছিলেন এয়ারম্যান মুজিবর রহমান। মুক্তিযোদ্ধাগণ কৌশলগত কারণে ৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে হানাদার বাহিনীকে মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নেন। ‎প্রথম দল কমান্ডার নজরুল ইসলামের (যুদ্ধে শহীদ) নেতৃত্বে অবস্থান নেয় ওয়াপদা ভবনের পাশে। ‎দ্বিতীয় দল কমান্ডার বিশ্বাস লুৎফর রহমানের (সাবেক নির্বাচন কমিশনার) নেতৃত্বে অবস্থান নেয় ওয়াপদা ভবন থেকে আধা কিলোমিটার দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জি-কে ক্যানেলের (গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের খাল) যেখান দিয়ে আবাইপুর বাজারের দিকে ঢোকার রাস্তায়। ‎তৃতীয় দল অবস্থান নেয় ওয়াপদা ভবনের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কুমার নদের তীরে।

‎‎তিন পয়েন্টেই মুক্তিযোদ্ধারা বাংকার খুঁড়ে তাতে অবস্থান নেন। স্থানীয় চরের মাধ্যমে এই খবর পাক সেনাদের কাছে পৌঁছে যায়।
‎‎১৪ অক্টোবর ভোর রাতে পাক সেনারা মুক্তি যোদ্ধাদের তিন অবস্থানের উপরে একযোগে আক্রমণ শুরু করে। পাক সেনারা সার্চ লাইট জেলে বাংকারের ভিতর গুলি করে এবং গ্রেনেড চার্জ করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু, মুক্তিযোদ্ধাদের থ্রী নট থ্রী রাইফেল আর অল্প সংখ্যক সাবমেশিন গান দিয়ে সম্মুখ যুদ্ধে অত্যাধুনিক ও ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাক বাহিনীকে মোকাবেলা করা কঠিন। তবুও এই অসম যুদ্ধ আধাঘণ্টার মতো স্থায়ী হয়েছিল। অবশেষে মুক্তিযোদ্ধারা বাংকার ছেড়ে পিছু হঠে যায়। ‎এই যুদ্ধে পাক সেনাদের একজন লেফটেনেন্ট নিহত হওয়া ছাড়াও পাক বাহিনী বেশ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। ‎সকাল হবার পর পাক বাহিনী শৈলকুপার দিকে চলে যায় এবং যাবার সময় ৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বন্দী করে সাথে নিয়ে যায়। এই ৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শৈলকুপা ব্রিজের দক্ষিণ পাশে নিয়ে হত্যা করে গণকবর দেয়। পরবর্তীতে সেখানেই গড়ে উঠেছে শৈলকুপা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অফিস।

‎‎সকালে পাক বাহিনী চলে যাবার পর স্থানীয় জনসাধারণ আবাইপুর গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ একত্রিত করে এবং ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের পাশে, ওয়াপদার ভিতরে এবং জি.কে খালের পাড়ে গণকবর দেয়। আবাইপুর যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা এবং স্থানীয় জনসাধারণ মিলে মোট ৪১ জন শহীদ হয়েছেন। কিন্তু, সকল শহীদের নাম কোথাও সংরক্ষিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের বাউন্ডারির মধ্যে গণকবরের পাশে স্মৃতি ফলকে লিপিবদ্ধ রয়েছে নিম্নোক্ত মাত্র ১৮ জন শহীদের নাম। তারা হলেন শহীদ নজরুল ইসলাম, শহীদ আবুল হোসেন, শহীদ আবু জাফর, শহীদ ইসমাইল হোসেন, শহীদ চেতন জোয়ার্দার, শহীদ ইউসুফ আলী, শহীদ আলিমুদ্দিন, শহীদ সিমার আলী, শহীদ আবু সুফিয়ান, শহীদ সিরাজুল ইসলাম, শহীদ কাশেম আলী, শহীদ আজিবর রহমান, শহীদ শাহাদত হোসেন, শহীদ বাবর আলী, শহীদ মকছুদ আলী, শহীদ শহীদুল ইসলাম, শহীদ রুস্তম আলী ও শহীদ সৈয়দ আলী। এ যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা, সাবেক সংসদ সদস্য দবির উদ্দীন জোয়ার্দার উল্লেখ করেন। এ যুদ্ধের একজন শহীদ শৈলকুপার হড়রা গ্রামের ইসমাইল হোসেন যিনি ১৯৭১ সালের ১৩ই অক্টোবর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৪ অক্টোবর তার বাসর হওয়ার কথা কিন্তু

‎ হঠাৎ সংবাদ এলো রাতে পাকসেনারা শৈলকুপার আবাইপুর অভিমুখে রওনা দেবে। ইসমাইল বাসর ছেড়ে যুদ্ধে চলে গেল। নববধুকে বলে গেল কাল ফিরে এসে বাসর হবে। ঐ রাতেই পাকসেনাদের আক্রমনে নজরুল, ইসমাইল সহ মোট ১৭জন স্পটে আবাইপুর ওয়াপদা ক্যাম্পে শহীদ হয়। এদিকে সংবাদ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল শত শত মানুষ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের দেখতে ছুটে এলো। চারদিকে শোকের ছায়া নেমে এলো। সবচেয়ে হৃদয় বিদারক যে ঘটনাটি ঘটেছিল, এলাকাবাসীর পাশাপাশি ইসমাইলের নববধু আলেয়া যে বাসরের অপেক্ষায় ছিল। সেই আলেয়াও এসেছে মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ দেখতে এবং তার স্বামীকে ফিরিয়ে নিতে। তখনও আলেয়ার হাতের মেহেদির গন্ধ বেরুচ্ছে, পরনে কনের পোশাক। ১৭ টি লাশ পাশাপাশি সাজানো। গণকবর ও খোঁড়া হয়ে গেছে। এক এক করে লাশগুলো কবরে নামানো হচ্ছে। যখন ইসমাইলের লাশ কবরে নামাবে অমনি নববধু আলেয়া ইসমাইলের লাশ যাপটে ধরে কাঁদতে কাঁদতে মুর্ছা গেল,সে যেন পাথর মুর্তি।

আরও পড়ুন

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।